হেপাটাইটিস-বি লিভারের একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এমনকি এই রোগ অনেক বৎসর পরও লিভারে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। উপযুক্ত পরিবেশে দেহের বাইরেও এই ভাইরাস কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে।
কিভাবে ছড়ায়?
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর রক্ত ও দেহ রসের মাধ্যমে ছড়ায়।
এই ভাইরাস একজন হতে আরেকজনের শরীরে নিম্নলিখিত উপায়ে সংক্রমিত হয়-
- জন্মের সময় নবজাতক তার মায়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। মা যদি সন্তান প্রসবের আগেই হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে শিশুটি যখন তার মায়ের রক্ত বা জরায়ু হতে নিঃসৃত রসের সংস্পর্শে আসে তখনই সংক্রমিত হয়। তবে বুকের দুধের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
- খেলাধুলার সময়ে আঘাতের কারণে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু হতে রক্ত বা অন্যান্য দেহ রসের মাধ্যমে সুস্থ শিশুর দেহে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
- ইনজেকশন দেওয়ার সময় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করলে বা নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে একজন হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত লোকের দেহ হতে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে।
- অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
লক্ষণ
প্রথমবারের মত যখন একজন কিশোর/কিশোরী বা প্রাপ্ত বয়স্ক লোক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন তার মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়-
- চোখ হলুদ হয়ে যায়, একে জন্ডিস বলে
- প্রস্রাবের রং হলুদ হয়
- পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে জ্বর হয়
- ক্ষুধা মন্দা এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে
- মাংশপেশী এবং হাড়ের সংযোগস্থলে (গিটে) ব্যথা হয়
- আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় অস্বস্তি অনুভব করে
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, হেপাটাইটিসের যেকোনো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেই জন্ডিস দেখা দেয়। আর হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন “বি” ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। সুতরাং এ কথা বলা যায় না যে, হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে আর জন্ডিস হবে না। কারণ “বি” ভাইরাস ছাড়াও বাকি ৪ প্রকার (হেপাটাইটিস এ,সি,ডি এবং ই) ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বা অন্য কারণে জন্ডিস হতে পারে।
প্রতিরোধ
তিন ডোজ পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন দিয়ে শিশুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
ইপিআই কার্যক্রমে হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি অন্তর্ভুক্তির পরে ডিপিটি এবং হেপাটাইটিস-বি টিকা আলাদা আলাদা না দিয়ে সমন্বিতভাবে ১টি টিকার মাধ্যমে ৫টি রোগের (ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি এবং হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি) বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। এই টিকাকে পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন বলা হয়েছে।